ডায়রিয়া হলে এই ভুলগুলো করা যাবে না

ডেইলি নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

ডায়রিয়া বা কয়েকবার পাতলা পায়খানা হলেই আমরা অনেকে মেট্রোনিডাজল–জাতীয় ওষুধ খেয়ে ফেলি। ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে আবার সেই ওষুধ খাওয়া ইচ্ছেমতো বন্ধ করে দিই। এই যে ওষুধগুলো খাচ্ছি, এগুলো কি আসলে এভাবে খাওয়া যায়?

মেট্রোনিডাজল কিসের ওষুধ

প্রকৃতপক্ষে এগুলো ডায়রিয়া থামানোরও ওষুধ নয়। এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক। সাধারণত অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। আর কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে তা পূর্ণ মেয়াদে সঠিকভাবে শেষ করতে হবে। যখন-তখন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। সাধারণত শুরু করলে একটি করে ট্যাবলেট প্রতিদিন আট ঘণ্টা পরপর সেবন করতে হবে। কিন্তু কথা হলো আদৌ ডায়ারিয়ায় সব সময় অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে কি না।

কখন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করবেন

  • তিন দিনের বেশি পাতলা পায়খানা থাকলে।
  • পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে।
  • পেটে ব্যথা থাকলে বা পেট মোচড়ালে।
  • তীব্র জ্বর থাকলে।

অনিয়মিত ওষুধ সেবনে কী ঝুঁকি হতে পারে

এই ওষুধগুলো অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক। অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের মতো এগুলোও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। এভাবে অনিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে আমাদের দেহ এসব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে পরবর্তী সময় যখন অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে জীবন বিপর্যয়কারী রোগে আক্রান্ত হবেন, তখন তা প্রতিরোধ করার জন্য এই ওষুধ কাজে আসবে না। এভাবে অপ্রয়োজনে ও অনিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে ধীরে ধীরে আমরা এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।

ডায়রিয়া চিকিৎসায় স্যালাইনই যথেষ্ট

  • ডায়রিয়া চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা খাবার স্যালাইন। কিন্তু এখনো আমাদের মধ্যে স্যালাইনের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
  • স্যালাইন হলো বিভিন্ন খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ লবণ। মনে রাখবেন, স্যালাইন কিন্তু ডায়রিয়া বন্ধ করে না। কিন্তু ডায়রিয়ার ফলে শরীরে যে পানি ও লবণশূন্যতা হয়, তার ঘাটতি পূরণ করে। বেশির ভাগ ডায়রিয়া নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু ডায়রিয়ায় মৃত্যুর কারণ হলো পানিশূন্যতা। তাই পানিশূন্যতা যাতে না হয়, কেবল সেই চিকিৎসা করলেই চলে।

স্যালাইন তৈরিতে ভুল

  • অনেকে অল্প পানিতে পুরো প্যাকেট বা অর্ধেক প্যাকেট স্যালাইন মিশ্রিত করেন। এটি ঠিক নয়। আধা লিটার পানিতে পুরো প্যাকেট মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
  • স্যালাইন তৈরির পর ছয় ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া ভালো। আর ১২ ঘণ্টা পর গ্রহণ করা যাবে না।
  • অনেকের ধারণা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের রোগীরা স্যালাইন খেতে পারবেন না। এটিও ভুল ধারণা। দরকার হলে অর্থাৎ পানিশূন্যতা রোধ করতে প্রয়োজনে সবাইকেই স্যালাইন খেতে হবে।

ভুল পদ্ধতিতে স্যালাইন তৈরির ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে

আধা লিটার বিশুদ্ধ পানিতে পুরো এক প্যাকেট স্যালাইন মিশ্রিত করতে হবে। অল্প পানির মধ্যে প্যাকেটটি মিশ্রিত করলে যে খনিজ লবণ আছে, তার মাত্রা বেড়ে যায় বা মাত্রা ঠিক থাকে না। দ্রবণে খনিজ লবণ ও পানির মাত্রা ঠিক না থাকলে রক্তের ঘনত্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। ফলে কোষ থেকে বিশেষ করে মস্তিষ্ক থেকে পানি বের হয়ে কোষ নষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

স্যালাইন তৈরির ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর ওই স্যালাইন ব্যবহার করলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, যা ডায়রিয়াকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Pin It on Pinterest

Share This